Logo

অপরাধ    >>   আয়নাঘরের’ প্রমাণ পেয়েছে কমিশন, জমা পড়েছে ৪০০ অভিযোগ!

আয়নাঘরের’ প্রমাণ পেয়েছে কমিশন, জমা পড়েছে ৪০০ অভিযোগ!

আয়নাঘরের’ প্রমাণ পেয়েছে কমিশন, জমা পড়েছে ৪০০ অভিযোগ!

বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার ১৩ কর্মদিবসে ৪০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া গেছে, যা 'আয়নাঘর' নামে পরিচিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি)। এই সেলটি ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তরের ভেতরেই অবস্থিত এবং সেখানে ২২টি সেল রয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কমিশনের সভাপতি, হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের অভিযোগ নিয়ে কমিশন কাজ করছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদেরও ডাক হবে এবং বক্তব্যের জন্য সমন দেওয়া হবে। অভিযুক্তরা না আসলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কমিশনের সভাপতি আরো জানান, সবচেয়ে বেশি গুমের অভিযোগ এসেছে র‍্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি ও সিটিটিসির বিরুদ্ধে। ২৫ সেপ্টেম্বর কমিশন ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘর পরিদর্শন করেছে এবং ১ অক্টোবর ডিবি ও সিটিটিসি পরিদর্শন করেছে। তবে সেখানে কোনো বন্দী পাওয়া যায়নি। সম্ভবত ৫ আগস্টের পর সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় ছিল, যা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ৭৫ জন ভুক্তভোগী সশরীরে এসে তাদের বিবৃতি দিয়েছেন, এবং অনেকে ডাকযোগে ও ইমেইলে অভিযোগ পাঠিয়েছেন। কমিশন প্রয়োজনে অভিযোগ গ্রহণের সময়সীমা আরও বাড়াতে পারে এবং তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে কিনা, সেটা পরে দেখা যাবে।

কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, আমরা ভুক্তভোগীদের পরিচয় গোপন রেখে প্রত্যেকটি অভিযোগ শুনতে চাই। ৪০০ অভিযোগের মধ্যে অনেক ঘটনা প্রথমবারের মতো সামনে এসেছে। কমিশনের সদস্য মিজ নাবিলা ইদ্রিস বলেন, এসব ঘটনায় আগে কেউ গুম নিয়ে কথা বলেননি এবং থানায় তাদের জিডি নেওয়া হয়নি।

কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন জানান, ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘরের সঙ্গে ভুক্তভোগীদের বর্ণনার মিল পাওয়া গেছে, তবে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে। বিশেষ করে, দেয়ালের লেখাগুলো পেইন্ট করে মুছে ফেলা হয়েছে। কমিশন মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েছে যে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আয়নাঘরের অবস্থায় কোনো পরিবর্তন না করার জন্য।

২৭ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সিআইডি, বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, ডিজিএফআই এবং কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। গুমের ঘটনা তদন্তে এই কমিশনের কার্যক্রম দেশের আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কমিশন দ্রুত তদন্ত শেষ করার জন্য কাজ করছে এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়ের আশ্বাস প্রদান করছে।